অ্যাপেন্ডিসাইটিস নামটির সাথে সাথে আমরা সকলেই কম বেশি পরিচিত । আমরা এও জানি অ্যাপেন্ডিসাইটিস হলে পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। কিন্তু তারপরও আমরা এ রোগটি নিয়ে উদাসীনতা দেখাই। পেটে ব্যথা হলেই আমরা গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা বলে এড়িয়ে যাই। কিন্তু সব ব্যথা গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা নয়।
সময়মতো অ্যাপেনডিক্সের ব্যথা চিহ্নিত করতে না পারলে ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের বিপদ। তাই আগে থেকেই যদি রোগটি সম্পর্কে ধারণা রাখা যায় তাহলে চিকিৎসাও করা যায় সহজে।
_____________________________________________
চলুন জেনে নেই অ্যাপেন্ডিসাইটিস কি ?
_____________________________________________
আপনার আমার সকলেরই পেটের নিচের দিকে বৃহদন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত থলির মতো একটি অঙ্গ থাকে। যেটি অ্যাপেনডিক্স নামে পরিচিত ।
যদিও চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত মানবদেহে এই অঙ্গের প্রয়োজনীয়তা খুঁজে বের করতে পারেননি । কোন কারনে যদি ব্যাকটেরিয়া এবং পরজীবীর সংক্রমণ অথবা মল বা কৃমি ঢুকে অ্যাপেন্ডিক্স ব্লক হয়ে নানা উপসর্গ দেখা দেয়, সেই অবস্থাটিকেই আমরা অ্যাপেন্ডিসাইটিস বলি।
__________________________________________
যে যে কারণে অ্যাপেন্ডিসাইটিস হয়
__________________________________________
১ | অ্যাপেনডিক্সের গহবর কোনও কারণে বন্ধ হলে |
২ | পায়খানা বা অন্য কিছু যেমন-পিত্তাশয় পাথর, টিউমার, কৃমি ইত্তাদি যাদি দ্বারা এপেনডিক্সের লুমেন বাধাগ্রস্ত হলে |
৩ | কোন কারনে অ্যাপেন্ডিক্স এর টিস্যুতে রক্ত চলাচল কমে যেয়ে সেখানে পরজীবী এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটলে |
উপরোক্ত কারণগুলোর কারণে অ্যাপেন্ডিক্স ফুলে গিয়ে প্রদাহের সৃষ্টি করে। সময়মতো চিকিৎসা প্রদান না করলে অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে গিয়ে পুরো পেটে ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।
____________________________________________________
এপেন্ডিসাইটিস হলে যে যে লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে
_____________________________________________________
পেট ব্যথা |
অ্যাপেন্ডিসাইটিস রোগের প্রধান ও অন্যতম লক্ষণ হলো পেটে ব্যথা হওয়া। এই ব্যথা সাধারণত নাভির কাছ থেকে শুরু হয়। পরবর্তীতে ব্যথাটি পেটের ডান দিকের নিচের অংশে যেখানে অ্যাপেন্ডিক্স থাকে সেখানে ছড়িয়ে পড়ে । শুরুতে ব্যথার তীব্রতা অল্প থাকলেও একটা পর্যায়ে গিয়ে অনবরত তীব্র ব্যথা দেখা দেয়। এছাড়াও ব্যথার আশেপাশে চাপ দিলে , হাঁটাচলা করলে কিংবা কাশি দিলে ব্যথার পরিমাণ বেড়ে যায় ।
জ্বর হওয়া |
অ্যাপেন্ডিসাইটিস হলে পেটের প্রচন্ড ব্যাথা থেকে রোগীর জ্বর আসতে পারে অথবা জ্বর জ্বর ভাব অনুভূত হতে পারে । তবে এক্ষেত্রে শরীরের তাপমাত্রা খুব বেশি থাকেনা।
ঢেকুর হওয়া |
অ্যাপেন্ডিসাইটিস হলে সাধারণত দেখা যায় যে রোগীর পেট থেকে বায়ু নির্গমন করতে কষ্ট হয় । তখন ঘনঘন ঢেকুর হতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা ডায়রিয়া |
অ্যাপেন্ডিসাইটিসের রোগীরা কখনো কখনো কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা ডায়রিয়া সমস্যায় ভুগতে পারেন
প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া |
অ্যাপেন্ডিসাইটিস হলে কিছু কিছু রোগী প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া অনুভব করেন
বমি হওয়া |
অ্যাপেন্ডিসাইটিস হলে পেট ব্যথার পাশাপাশি রোগীর খাবারে অরুচি দেখা দেয় এবং খাবার হজম করতে কষ্ট হয়। সেখান থেকে রোগীর বমি বমি ভাব অথবা দু-একবার বমিও হতে পারে।
অ্যাপেন্ডিসাইটিসের লক্ষণগুলো দেখা দিলে আপনি কি করবেন ?
উল্লেখিত লক্ষণগুলো যদি আপনার মধ্যে দেখা দেয় তাহলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
মানুষের দেহে অ্যাপেন্ডিক্স এর প্রয়োজনীয়তা অস্পষ্ট হলেও কোন কারণে অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে গেলে সেটি
জীবননাশের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সময়মতো চিকিৎসা না করলে অ্যাপেন্ডিক্স ছিদ্র হয়ে খাবারের অংশ, মল সমগ্র পেটে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং এ কারণে অনেকের পেট ফুলে যায়।
সুতরাং বলা চলে যে অ্যাপেন্ডিসাইটিস রোগীর চিকিৎসা নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনভাবেই বিলম্ব করা যাবে না।
অ্যাপেন্ডিসাইটিস আপনার হয়েছে কি হয়নি নিশ্চিন্ত হবেন কিভাবে ?
অ্যাপেন্ডিসাইটিসের লক্ষণ গুলো আপনার মধ্যে দেখা দেওয়ার সাথে সাথেই আপনাকে দ্রুত একজন দক্ষ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। সাধারণত রোগীর লক্ষণসমূহ পর্যবেক্ষণ করেই অনেকাংশে রোগ নির্ণয় করা সম্ভব তবে আপনার চিকিৎসক আরো নিশ্চিত হওয়ার জন্য কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর
পরামর্শ দিতে পারেন । এসব পরীক্ষার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-
শিশু এবং গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে আল্ট্রাসাউন্ড পদ্ধতি গ্রহণ করা হয় কেননা সেক্ষেত্রে তেজস্ক্রিয়তার জনিত ক্ষতি হবার ঝুঁকি থাকে না।
________________________________________
অ্যাপেন্ডিসাইটিস রোগের চিকিৎসা
________________________________________
অপারেশনের মাধ্যমে অ্যাপেন্ডিক্স কেটে ফেলাটাই হলো অ্যাপেন্ডিসাইটিস রোগের প্রধান চিকিৎসা। কোন ঔষধ অথবা অ্যান্টিন্টিবায়োটিক এর মাধ্যমে এই রোগ সারানো যায় না । আপনার যদি অ্যাপেন্ডিসাইটিস ধরা পড়ে তাহলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে আপনার অ্যাপেন্ডিক্স কেটে ফেলতে হবে। তবে এক্ষেত্রে ভয়ের কিছু নেই অ্যাপেনডিক্স কেটে ফেললেও শরীরে তেমন কোনো সমস্যা দেখা দেয় না আপনার স্বাভাবিক জীবনযাপনের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। আর একবার অ্যাপেনডিক্স কেটে ফেলে দিলে পরবর্তীতে পুনরায় এপেন্ডিসাইটিস হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। বরং একবার অ্যাপেন্ডিসাইটিস ধরা পরলে সেটি যদি অপসারণ না করা হয় ভবিষ্যতে সেটি মারাত্মক কারণ হতে পারে।
চিকিৎসা পদ্ধতিঃ
অপারেশন ছাড়া অ্যাপেন্ডিক্স অপসারণের সুযোগ নেই এই ক্ষেত্রে সাধারণত দুই ধরনের পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়। যেমন-
ল্যাপারোস্কোপি সার্জারি |
এই পদ্ধতিটি খুবই জনপ্রিয় এবং অপারেশনের পরে রোগীর সেরে উঠতে অপেক্ষাকৃত কম সময় লাগে। এই পদ্ধতিতে পেটের মধ্যে ছোট ছোট কয়েকটি ছিদ্র করে অ্যাপেন্ডিক্স এর অবস্থান খুঁজে বের করা হয় জন্য এবং ছিদ্রগুলো দিয়ে
বিশেষ কিছু যন্ত্র প্রবেশ করানো হয়। পরবর্তীতে এপেনডিক্স অপসারণ করার পর ছিদ্রগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় ।
ওপেন সার্জারি |
ওপেন সার্জারির ক্ষেত্রে অ্যাপেন্ডিক্স এর অবস্থান বরাবর তলপেটের ডান পাশে কেটে অ্যাপেন্ডিক্স বের করে ফেলা হয় । অ্যাপেন্ডিক্স বের করে ফেলার পর সেলাই এর মাধ্যমে কাটা অংশ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
যেই পদ্ধতি অপরেশন করা হোক না কেন অ্যাপেন্ডিক্স বের করে ফেলার পর অ্যাপেন্ডিক্স কোষে ক্যান্সারের উপস্থিতি আছে কিনা সেটি পরীক্ষা করার জন্য ল্যাবরেটরিতে বায়োপসি করতে পাঠানো হয়।
_______________________________________________
অপারেশন পরবর্তী সমস্যা
_______________________________________________
তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট
https://bn.wikipedia.org/wiki/অ্যাপেন্ডিসাইটিস, https://shohay.health/conditions/appendicitis