যৌন চাহিদা বা যৌন ইচ্ছা মানুষের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডেরই একটা অংশ। আমাদের দেহে নানা ধরনের জৈবিক চাহিদা রয়েছে যার মধ্যে যৌন ইচ্ছা অন্যতম। যৌন ইচ্ছার কল্যাণেই নারী-পুরুষ একে অপরের সাথে যৌন মিলনে আবদ্ধ হন যা কিনা মানবজাতির বংশপরম্পরায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বর্তমানকালে পুরুষদের মধ্যে এক ধরনের যৌন অনিচ্ছা দেখা দেয়। অনেক পুরুষই তার সঙ্গিনীকে পরিপূর্ন যৌনসুখ দিতে পারেন না এমনকি তিনিও পরিপূর্ণ যৌন সুখ পান না। এই সমস্যাটি এতটাই তীব্র যে অনেক পুরুষের মধ্যে যৌনমিলনে অবহেলা কাজ করে। ফলস্বরূপ স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য জীবনে কলহ লেগেই থাকে যা সামাজিক এবং দৈনন্দিন জীবনে নানামুখী প্রভাব ফেলে।
পুরুষের যৌন অনিচ্ছার কারণ
যৌনসুখ সব পুরুষেরই কাম্য। এটি পুরুষের একটি সহজাত প্রক্রিয়া।পুরুষের যৌন অনিচ্ছার পিছনে যে যে কারণগুলি রয়েছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-
টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যাওয়া |
টেস্টোস্টেরন হরমোন নামটি খুবই পরিচিত একটি নাম। পুরুষের যৌন অনিচ্ছার অন্যতম কারণ হিসেবে টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যাওয়াকে দায়ী করা হয়।
চলুন জেনে নেই টেস্টোস্টেরন হরমোন কি?
টেস্টোস্টেরন হরমোন পুরুষের সেক্স হরমোন নামে পরিচিত। এটি একটি স্টেরয়েড হরমোন যা পুরুষের শুক্রাশয়ে উৎপন্ন হয়। টেস্টোস্টেরন হরমোনের প্রধান কাজ হলো পুরুষের যৌন ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করা। এছাড়াও হাড়ের ঘনত্ব ও মুড নিয়ন্ত্রণে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
নারীদেহে খুবই সামান্য পরিমাণ টেস্টোস্টেরন হরমোনের উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায়। নারীদের মধ্যে টেস্টোস্টেরন এর বিপাক হার পুরুষদের তুলনায় ২০ গুণ কম।
পুরুষের যৌন অনিচ্ছায় টেস্টোস্টেরন হরমোনের ভূমিকা
যৌন দুর্বলতা দেখা দেওয়া
টেস্টোস্টেরন পুরুষের যৌনসঙ্গমের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এছাড়াও শুক্রাণু উৎপাদনে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে গেলে যৌন ক্ষমতা হ্রাস পায়, অণ্ডকোষ ছোট হয়ে যায়। অনেকে আবার যৌনমিলনের জন্য পর্যাপ্ত এনার্জি পান না।
লিঙ্গের দৃঢ়তা ধরে রাখতে না পারা
টেস্টোস্টেরন এর মাত্রা কমে গেলে অনেক পুরুষই যৌন
সঙ্গমের সময় লিঙ্গের দৃঢ়তা ধরে রাখতে পারেননা। তাদের মধ্যে ইরেক্টাইল ডিসফাংশন বা লিঙ্গ শিথিলতা দেখা দেয়। ফলে তারা যৌন মিলনের সময় আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। লিঙ্গের দৃঢ়তা ধরে রাখতে না পারার কারনে তাদের মধ্যে যৌন অনিচ্ছা কাজ করে।
আপনার টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে গিয়েছে কিনা কিভাবে বুঝবেন?
মানসিক অবসাদ |
মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে যাওয়াটা আমাদের সমাজে খুবই প্রচলিত একটি সমস্যা। অনেকেই কাজের চাপে,পারিবারিক কারণে,অর্থনৈতিক সমস্যায় কিংবা স্বাস্থ্যগত কারণে মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
এই অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়াটা পুরুষদের যৌন মিলনেও প্রভাব ফেলে।
আত্মবিশ্বাসের অভাব |
বেশকিছু সমীক্ষা থেকে থেকে জানা যায় শতকরা ২৫ ভাগ পুরুষরা যৌন মিলনের সময় যৌন পারফরম্যান্স নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন। তারা তাদের সঙ্গিনীকে সন্তুষ্ট করতে পারবেন কি পারবেন না সেই চিন্তা তাদের মধ্যে কাজ করে। এ সকল কারণে তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা দেয় এবং এক ধরনের যৌন অনিচ্ছা কাজ করে।
অনিয়ন্ত্রিত অ্যালকোহল সেবন |
অনেক পুরুষই অ্যালকোহল সেবন করে থাকেন। দীর্ঘ সময় ধরে অ্যালকোহল সেবন করতে থাকলে যৌন অক্ষমতা সহ নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। যেমন-
অতিরিক্ত শরীরচর্চা |
সুস্থ সবল থাকার জন্য শরীরচর্চার বিকল্প নেই। শরীর থেকে অতিরিক্ত মেদ কমানোর জন্য কিংবা সুগঠিত পেশি তৈরীর জন্য অনেকেই আজকাল জিম এর শরণাপন্ন হচ্ছেন। প্রিয় সঙ্গিনীর নিকট নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলতে কে না চান। তবে কোনকিছুই অতিরিক্ত ভালো না। তেমনি ভাবে অতিরিক্ত শরীরচর্চাও ভালো নয়।
অতিরিক্ত শরীরচর্চার কারণে শরীরের পেশি দুর্বল হয়ে পড়ায় অনেকে নিজেকে ক্লান্ত অনুভব করেন। ফলে যৌন মিলনের সময় তাদের মধ্যে এক ধরনের যৌন অনিচ্ছা কাজ করে।
অপর্যাপ্ত ঘুম |
দৈনন্দিন জীবনে ঘুমের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাতে পারলে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।মন ফুরফুরে থাকে এবং যৌনজীবনে উদ্দীপনা বাড়ায়। অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে পুরুষের শরীরে টেস্টোস্টেরন এর পরিমাণ কমে যায়। একই সাথে শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ফলে যৌন মিলনে অনিচ্ছা কাজ করে।
প্রেসক্রিপশন ব্যতীত ঔষধ এর প্রভাব |
আমরা বিভিন্ন সময়ে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই নানা ধরনের ঔষধ সেবন করে থাকি। এ সকল ওষুধের অনেক সময় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। উদাহরণসরুপ বলা যায় যে আমাদের শরীরে যৌন সমস্যা সহ দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও অনেকে যৌন উত্তেজনা বাড়ানোর জন্য এবং সহবাসের স্থায়িত্ব বাড়ানোর জন্য প্রেসক্রিপশন ছাড়াই নানা ধরনের ওষুধ সেবন করে থাকেন যেগুলোর পার্শপ্রতিক্রিয়া আমাদের অজানা। ফলে একটা সময় পরে সেবনকারীর শরীরে নানা ধরনের যৌন সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেখান থেকেই যৌন অনিচ্ছার সৃষ্টি হতে পারে।
দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা |
অনেক পুরুষই ডায়বেটিস, হার্টের সমস্যা সহ নানা ধরনের অসুখে দীর্ঘদিন ধরে ভুগছেন। তাদের মধ্যে যৌন মিলনে এক ধরনের অবহেলা লক্ষ করা যায়।
বাড়ন্ত বয়স |
বর্তমান সময়ের দিনকাল আর আগের দিনের দিনকালের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে. আজকালকার দিনের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটাই আলাদা বর্তমান সময় ইন্টারনেট ব্যবস্থা এবং পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাবে অনেক কিছুই সহজলভ্য হয়ে গেছে এই কারণে বাড়ন্ত বয়সের ছেলে মেয়েদের মধ্যেও যৌন তীব্রতার প্রভাব লক্ষণীয় বাড়ন্ত বয়সে কম বয়সী ছেলেমেয়েরা নানা ধরনের যৌন সমস্যায় ভুগতে পারে. যেমন-
বাড়ন্ত বয়সে কিশোররা হস্তমৈথুনের মাধ্যমে তাদের যৌন প্রবৃত্তি নিবারণ করে। যেটি পরবর্তীতে যৌন মিলনের সময় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
আজকাল ইন্টারনেটের ব্যাপক বিস্তারের কারণে পর্ন ভিডিও খুবই সহজলভ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং অনেকে এটিকে অভ্যাসে পরিণত করে ফেলছে। এই অভ্যাসের কারণে পরবর্তীতে সঙ্গিনীর সাথে যৌন মিলনে নানা ধরনের যৌন অনিচ্ছা দেখা দিতে পারে।
বাড়ন্ত বয়সের ছেলেমেয়েদের যৌনতা নিয়ে কৌতুহল খুবই বেশি। এই কৌতুহলের কারনে কেউ কেউ অল্প বয়সে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়। একটা সময়ে গিয়ে অজ্ঞতার কারণে তাদের মধ্যে নানা ধরনের যৌন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সেক্স এডুকেশন নিয়ে আমাদের দেশের বাবা-মা রা ভুল ধারণা ধারণা পোষণ করেন। অনেক বাবা-মা তার সন্তানকে যৌন শিক্ষা দিতে লজ্জিত বোধ করেন। ফলে বাড়ন্ত বয়সের ছেলেমেয়েদের মধ্যে একটা যৌনশিক্ষার অভাব দেখা দেয়। এ শিক্ষার অভাবে উঠতি বয়সের অনেকেই অজ্ঞতা এবং কৌতূহল এর কারনে অতি অল্প বয়সে নানা ধরনের যৌন কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে যায় যা পরবরতিতে তাদের যৌন জীবনে প্রভাব ফেলে।