অনুক্রমনিকা ১. ডেঙ্গু বা ডেঙ্গু জ্বর বলতে আমরা কি বুঝি? ২. ডেঙ্গুর লক্ষণ ৩. ডেঙ্গু জ্বরের কারণ ও বিস্তার ৪. ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা ৫. বাসায় কিভাবে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা করবেন? ৬. ডেঙ্গু রোগী কে কখন হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে? ৭. ডেঙ্গু জ্বরের সাথে প্লাটিলেট কমে যাওয়ার কি সম্পর্ক? ৮. ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে কিছু ভুল ধারণা ৯. ডেঙ্গু জ্বর রোধে প্রতিকার এবং প্রতিরোধ ১০. যা না বললেই নয় |
বাংলাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী এ বছর দেশের বিভিন্ন হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর ভর্তি সংখ্যা ইতিমধ্যে ৫ হাজার ছাড়িয়েছে। এই সংক্রমণটিকে অবহেলা করার সুযোগ নেই, কারণ ডেঙ্গুজ্বর গুরুতর পর্যায়ে চলে গেলে জীবননাশের সম্ভাবনা থাকে। ডেঙ্গু মহামারী আকার ধারণ করার আগেই ডেঙ্গু প্রতিরোধে যা যা করণীয় সেগুলোর জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
______________________________________________________________
ডেঙ্গু বা ডেঙ্গু জ্বর বলতে আমরা কি বুঝি?
______________________________________________________________
ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ। ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী স্ত্রী এডিস মশার র্কামড়ের ফলে মানুষের শরীরে ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলো দেখা দেয়। এটি একটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগ। সাধারণত, জুলাই মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ দেখা যায়। বাংলাদেশে এই রোগের ভয়াবহতা কম নয়। বিনা চিকিৎসায়, ভুল চিকিৎসায়, এবং কখনও কখনও চিকিৎসা নিতে বিলম্ব করার জন্য প্রতিবছর অনেক রোগী ডেঙ্গুজ্বরে মৃত্যুবরণ করেন।
______________________________________________________________
ডেঙ্গুর লক্ষণ
______________________________________________________________
ডেঙ্গুর প্রধান এবং অন্যতম লক্ষণ হচ্ছে জ্বর। শরীরের তাপমাত্রা ৯৯ ডিগ্রি থেকে ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে। এই জ্বর দুই থেকে পাঁচ দিন একটানা থাকতে পারে অথবা ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে দেওয়ার পর আবারও আসতে পারে। তবে জ্বর হলেই সেটি ডেঙ্গুজ্বর কিনা তা শুরুতে নিশ্চিত হওয়া যায় না। কখনো কখনো ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে কোন ধরনের লক্ষণ প্রকাশ নাও পেতে পারে। ডেঙ্গু হলে জ্বরের পাশাপাশি আরো যে সকল উপসর্গগুলো দেখতে পাওয়া যায় সেগুলো হলো-
এ সকল উপসর্গগুলো ডেঙ্গুর সাধারণ উপসর্গ। কখনো কখনো ডেঙ্গু সংক্রমণ খুবই মারাত্মক আকার ধারণ করে সিভিয়ার ডেঙ্গু তে পরিণত হয়।
সিভিয়ার ডেঙ্গুর লক্ষণ গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-
এ সমস্ত উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হাসপাতলে ভর্তি করে যথাপোযুক্ত চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে হবে।
___________________________________________________________
ডেঙ্গু জ্বরের কারণ ও বিস্তার
___________________________________________________________
সোজা কথায় বলতে গেলে ডেঙ্গু ভাইরাসের কারণে ডেঙ্গু জ্বর হয়। স্ত্রী এডিস মশা ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক হিসেবে কাজ করে। এই মশাগুলো সাধারণত অন্যান্য মশার থেকে কিছুটা বড় এবং এদের গায়ে ডোরাকাটা দাগ থাকে। এরা পানির মধ্যে ডিম ফোটায় এবং যেকোনো জলাবদ্ধ স্থানে বংশবিস্তার করতে পারে। একারণে বর্ষাকালে এই মশার উপস্থিতি বেশি দেখতে পাওয়া যায়।
তবে মনে রাখতে হবে যে, এডিস মশা কামড়ালেই ডেঙ্গু হয় না। যে সকল এডিস মশা ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করে সে সকল মশার কামড়েই সাধারণত ডেঙ্গু হয়।
মজার ব্যাপার হচ্ছে এডিস মশা সাধারণত দিনের বেলা কামড়ায় তাই ডেঙ্গু ভাইরাসের সংক্রমণ দিনের বেলায় হয়। স্ত্রী এডিস মশা ডেঙ্গু জ্বর সংক্রমিত ব্যক্তি থেকে সুস্থ ব্যক্তির দেহে ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারে। আর এভাবেই ডেঙ্গু জ্বর একজন থেকে আরেকজনের মাঝে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
___________________________________________________________
ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা
___________________________________________________________
ডেঙ্গু রোগের সুনির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা নেই। ডেঙ্গু ভাইরাসের বিরুদ্ধে কোন বিশেষ ওষুধ বা প্রতিষেধক এখন পর্যন্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করতে পারেননি। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ডেঙ্গু জ্বর নিজ থেকে ভালো হয়ে যায়। উপসর্গ অনুযায়ী ঘরোয়া চিকিৎসা করতে পারলে এই রোগের সংক্রমণ কমে যায়। তবে সিভিয়ার অবস্থা হলে রোগীকে অবশ্যই হাসপাতালে রেখে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
______________________________________________________________
বাসায় কিভাবে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা করবেন?
______________________________________________________________
______________________________________________________________
ডেঙ্গু রোগী কে কখন হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে?
______________________________________________________________
সাধারণত পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিলেএবং ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করলে ডেঙ্গু রোগী ভালো হয়ে যান। তবে সবার ক্ষেত্রে একথাটি খাটে না। অনেকের অবস্থা খুবই বেগতিক আকার ধারণ করে। ক্রমাগত বমি হলে কিংবা প্রচন্ড পেটে ব্যথা হলে কিংবা রক্তক্ষরণ হলে দেরি না করে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। এছাড়াও যাদের ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি না নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করাই উত্তম।
______________________________________________________________
ডেঙ্গু জ্বরের সাথে প্লাটিলেট কমে যাওয়ার কি সম্পর্ক?
______________________________________________________________
ডেঙ্গু হলে সাধারণত আমরা একটা কথা খুব বেশি শুনি আর সেটি হল প্লাটিলেট বা অনুচক্রিকা কমে যাওয়া। প্লাটিলেটের সংখ্যা যদি ১০ হাজারের ওপরে থাকে আর যদি রোগীর কোন ধরনের রক্তপাত না হয়, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেন।
______________________________________________________________
ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে কিছু ভুল ধারণা
______________________________________________________________
______________________________________________________________
ডেঙ্গু জ্বর রোধে প্রতিকার এবং প্রতিরোধ
______________________________________________________________
১ | যেহেতু ডেঙ্গু একটি মশা বাহিত রোগ সেহেতু মশার কামড়ের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করুন এবং পরিবারকেও মশা কামড়ানোর হাত থেকে বাঁচান। |
২ | বদ্ধ জলাশয়ে এডিস মশা বাস করে। তাই আপনার এবং আপনার বাসার আশেপাশে কোথাও পানি জমতে দেবেন না। আর যদি ফুলের টব, নারিকেলের খোসা, বালতি ইত্যাদিতে পানি জমে থাকতে দেখেন, তবে সেগুলো ফেলে দিতে হবে। |
৩ | নিজেকে সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। |
৪ | ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে |
৫ | মশা নিরোধক কেমিক্যাল ব্যবহার করতে পারেন। |
৬ | বাড়ির আশেপাশে যেন ময়লা আবর্জনা জমে থাকতে না পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। |
_________________________________________________________
যা না বললেই নয়
_________________________________________________________
ডেঙ্গু রোগটি নিয়ে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। এটি খুবই সাধারণ একটি হওয়ার সত্বেও এ রোগে মৃত্যুবরণ করা রোগীর সংখ্যা খুব একটি কম নয়। শহরের হাসপাতালগুলোতে গেলে বুঝতে পারা যায় এই রোগের তীব্রতা কতটা ভয়াবহ। তাই প্রতিকারের থেকে প্রতিরোধ ব্যবস্থার উপর বিশেষ নজর দিতে হবে।