অনুক্রমণিকা
১। কিডনি স্টোন কি?
২। কিডনি স্টোন এর কারণ
৩। কিডনি স্টোন এর লক্ষণ ও উপসর্গ
৪। কিডনি স্টোন কিভাবে নির্ণয় করা হয়?
৫। কিডনি স্টোন হলে কি করবেন?
৬। কিডনি স্টোন প্রতিরোধের উপায়
৭। যা না বললেই নয়
দৈনন্দিন জীবনে চলাফেরার মাঝে আমরা প্রায়ই শুনতে পাই অনেকেরই কিডনিতে পাথর হয়েছে এবং তারা নানা ধরনের শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন।অনেকের হয়তো সার্জারির ও প্রয়োজন হতে পারে কিডনি স্টোন সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য।এ সমস্যাটি সম্পর্কে আগে থেকে ধারণা থাকলে অনেকাংশই এই রোগ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব।
কিডনি মানবদেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য কিডনির ভূমিকা অপরিসীম। কিডনি শরীরের রক্তকে পরিশুদ্ধ করার পাশাপাশি শরীর থেকে ক্ষতিকারক উপাদান বের করে দেয় এবং মানবদেহে বিভিন্ন তরল, রাসায়নিক এবং খনিজের স্তরে ভারসাম্য বজায় রাখে।
কিডনি স্টোন কি?
কিডনি স্টোন সমস্যাটি খুবই গুরুতরএকটি সমস্যা। আমরা সারাদিন যে সমস্ত খাবার খাই সেগুলোর বিপাক ক্রিয়া সংঘটিত হয় কিডনিতে। কিডনিতে তাই ক্যালসিয়াম ফসফেট, ইউরিক এসিড সহ নানা ধরনের লবণ ও খনিজ পদার্থ জমতে থাকে। সাধারণত মূত্রের সাহায্যে তা দেহ থেকে বের হয়ে যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা আর বের হতে পারে না। এ সকল লবণ এবং খনিজ পদার্থ কিডনিতে জমে জমে একটা শক্ত পদার্থ তৈরি করে, সেটি কিডনি স্টোন নামে পরিচিত। প্রথম অবস্থায় বালির মত আকারে থাকলেও পরবর্তীতে তা আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে এবং নানা ধরনের সমস্যার উদগ্রীব করে।
কিডনি স্টোন এর কারণ
যেকোনো বয়সের যেকোন মানুষের কিডনিতে স্টোন হতে পারে। কিডনিতে কেন স্টোন হয় সেগুলো নিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত গবেষণা করে যাচ্ছেন। কিডনিতে স্টোন হওয়ার অন্যতম কারণগুলো হচ্ছে-
প্রস্রাব অত্যধিক ঘন হলে সেখান থেকে পাথরের সৃষ্টি হয়।
পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পানের বিকল্প নেই। যারা দৈনন্দিন চাহিদা অনুযায়ী পানি পান করেন না তাদের কিডনিতে পাথর বা স্টোন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
প্রস্রাবে ক্যালসিয়াম ও ইউরিক এসিডের পরিমাণ বেড়ে গেলে সেখান থেকে স্টোন তৈরি হতে পারে।
অনেকের প্রস্রাবের রাস্তায় নানা ধরনের সমস্যা থাকে। সময়মতো প্রস্রাব হয় না কিংবা প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া, দীর্ঘদিন ধরে প্রস্রাবের সমস্যায় ভুগছেন,তাদের ক্ষেত্রে কিডনি স্টোন দেখা দেয়।
শরীরে কিছু কিছু রয়েছে যেগুলো কিডনিতে পাথর জমতে বাধা দেয় সে সকল উপাদান কমে গেলে কিডনি স্টোন তৈরি হয়।
অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জনিত সমস্যায় আক্রান্ত। তাদের ক্ষেত্রে কিডনিতে স্টোন হয়।
অনেকেই শাকসবজি ও ফল-ফলাদি খেতে চান না। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এ থেকে কিডনি স্টোন হতে পারে।
কিডনি স্টোন এর লক্ষণ ও উপসর্গ
কিডনি আমাদের শরীরে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। তাই নিচের লক্ষণগুলো দেখামাত্র দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। কিডনিতে স্টোন হওয়ার লক্ষণ গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-
এসকল লক্ষণগুলো সকলের ক্ষেত্রে সমানভাবে নাও দেখা দিতে পারে। কিডনি স্টোন হাওয়ার শুরুর দিকে এসকল লক্ষণ সাধারণত দেখা দেয় না। তাই লক্ষ্য রাখতে হবে প্রয়োজনমতো পানি পান করার পরে প্রস্রাবের পরিমাণ ঠিক আছে কিনা কিংবা অন্য কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা।
কিডনি স্টোন কিভাবে নির্ণয় করা হয়?
কিডনি স্টোন হলে কি করবেন?
আপনার চিকিৎসক যদি নিশ্চিত হন যে আপনার কিডনিতে স্টোন রয়েছে তাহলে তিনি নিম্নোক্ত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করবেন।
ওষুধের মাধ্যমে
কিডনি স্টোন যদি ছোট আকারে থাকে তাহলে তা ওষুধের সাহায্যে মূত্রের সঙ্গে বের করার চেষ্টা করা হয়।
শক ওয়েব ব্যবহার করে
কিডনির উপরের দিকে যদি স্টোন হয়ে থাকে,এক্ষেত্রে শকওয়েব এর সাহায্যে স্টোন ভেঙে ফেলা হয়।
পিসিএনএল
এই পদ্ধতিতে ছোট একটি ছিদ্র করে পিঠের দিক দিয়ে যেকোনো আকারের পাথর বের করে ফেলা সম্ভব। এই পদ্ধতিটি খুবই আধুনিক এবং আমাদের বাংলাদেশেও এই পদ্ধতিতেই কিডনি স্টোন বের করা হয়।
সার্জারির মাধ্যমে
সার্জারির মাধ্যমে খুব সহজেই কিডনি থেকে স্টোন বের করে ফেলা সম্ভব হয়। তবে বর্তমান সময়ে সার্জারি ছাড়াই বিভিন্ন আধুনিক পদ্ধতি অবলম্বন করে অনেকটা ব্যাথা নাশক উপায়ে কিডনি স্টোন বের করা হয়।
কিডনি স্টোন প্রতিরোধের উপায়
যা না বললেই নয়
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, অস্বাস্থ্যকর খাবার, অপরিমিত ঘুম এবং সঠিক শরীরচর্চার অভাবে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনিতেই কম। তার উপর যদি কিডনি স্টোন সমস্যা দেখা দেয়, সেটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নানা প্রভাব ফেলে। কিডনি স্টোন এমন নয় যে একবার অপসারণ করে ফেললে সেটি আর ভবিষ্যতে হবে না। তাই এখন থেকেই আমাদেরকে সচেতন হতে হবে।
তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট