শরীরের যেমন একটি মন হয়, তেমনি মনেরও একটি শরীর রয়েছে। সেই শরীরও রোগ-বালাইয়ের শিকার হতে পারে, আর তার জন্য দরকার মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষা। তাই, মানসিক স্বাস্থ্য দিবস (১০ অক্টোবর) আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয় – নিজেকে জানো, সুরক্ষিত রাখো।
১৯৯২ সালে প্রথম পালিত এই দিবসটি, আজ সারা পৃথিবীজুড়ে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতার দিন হিসেবে পালিত হয়। সুস্থ শরীরের মতো সুস্থ মনও জীবনযাত্রার জন্য সমানভাবে জরুরি। অধিকাংশ মানুষই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা এবং তার লক্ষণগুলির সম্পর্কে সচেতন নয়। তাই, যখন কেউ মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হয়, তখন তা দ্রুত শনাক্ত করতে সাহায্য করা উচিত।
বন্ধু-বান্ধব, পরিবার এবং সহকর্মীদেরও আচরণ সম্পর্কে সচেতন থাকা গুরুত্বপূর্ণ। যদি কাউকে মানসিক রোগের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা যায়, তবে তাদের সাথে কথা বলে সমস্যাটি বুঝতে উৎসাহিত করুন, এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা সহায়তা নিতে সাহায্য করুন।
"মানসিক রোগ: এক নতুন দৃষ্টিকোণ" |
এক সময় ছিল যখন মানুষ তাদের মানসিক সমস্যা নিয়ে কথা বলতে লজ্জা পেত, যাতে কেউ তাদের মানসিক রোগী হিসেবে না ভাবেন। কিন্তু বর্তমান যুগে, বিশেষ করে করোনার পর, মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিশ্বের মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়তে শুরু করেছে। এই একই সময়ে, সকল বয়সের মানুষের মধ্যে মানসিক সমস্যার ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যা বিশ্বব্যাপী মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের পরিসংখ্যান এবং গবেষণায় নিশ্চিত হয়েছে।
মানসিক রোগ কী? |
মানসিক রোগ হল একটি শারীরিক সমস্যা, যা আপনার চিন্তা, মেজাজ বা আচরণকে প্রভাবিত করতে পারে। এটি আপনার চারপাশের পৃথিবী কেমন দেখেন এবং উপলব্ধি করেন, তাও প্রভাবিত করতে পারে। মানসিক রোগ ব্যক্তির কর্মক্ষেত্রে, সম্পর্কের মধ্যে এবং দৈনন্দিন কাজকর্মের সামর্থ্যেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
মানসিক রোগ কখনও বা কিছু সময়ের জন্য হয়, আবার কখনও সারা জীবনের জন্য স্থায়ী হয়ে যেতে পারে। কিছু রোগ একেবারে ছোট্ট সময়ের মধ্যে সেরে ওঠে, আবার কিছু রোগ জীবনব্যাপী হয়ে থাকে এবং গুরুতর অক্ষমতার কারণ হয়। প্রতি বছর প্রায় ১ জনে ৫ জন অস্ট্রেলিয়ানে মানসিক রোগ দেখা দেয় এবং প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা জীবনের কোনো না কোনো সময়ে মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হয়।
মানসিক রোগের প্রকার |
মানসিক রোগের অনেক ধরন রয়েছে। প্রধান কিছু ধরন হল:
মানসিক রোগের লক্ষণ |
প্রতিটি মানসিক রোগের আলাদা লক্ষণ থাকে। উদাহরণস্বরূপ, অতিরিক্ত ডায়েটিং এক ধরনের খাদ্য সম্পর্কিত রোগের লক্ষণ হতে পারে, আবার শোনা না যাওয়ার মতো কণ্ঠস্বর শোনার মধ্যে থাকতে পারে মনোরোগ।
এছাড়া, বিষণ্নতায় ভোগা ব্যক্তি দীর্ঘস্থায়ী দুঃখ বা খারাপ মেজাজ অনুভব করে, উদ্বেগজনিত রোগীরা অতিরিক্ত চিন্তা বা ভয় অনুভব করে। এসব ক্ষেত্রে, কিছু অস্বাভাবিক পরিবর্তন বা লক্ষণ দেখা দিলে তা মানসিক রোগের ইঙ্গিত হতে পারে।
কী কারণে মানসিক রোগ হয়? |
মানসিক রোগের সঠিক কারণ নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখনও গবেষণা করছেন। তবে এটা নিশ্চিত যে, একাধিক কারণ মিশ্রিত হয়ে মানসিক রোগ সৃষ্টি করতে পারে। এর মধ্যে বংশগত গুণ, সামাজিক পরিবেশ, পারিবারিক জীবন, মস্তিষ্কের কাজের ধরন, এবং বাইরের পরিবেশ সবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এছাড়া, শারীরিক সমস্যা, মাদকাসক্তি, শৈশবকালীন নেতিবাচক অভিজ্ঞতা, মানসিক চাপ বা ট্রমা, এবং জীবনের বড় বড় মানসিক চাপও মানসিক রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
কখন ডাক্তার দেখানো উচিত? |
যদি আপনি মানসিক রোগের লক্ষণ অনুভব করেন, তবে প্রথমেই আপনার ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। কারণ, যদি তা আপনার দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করতে থাকে, তবে দ্রুত চিকিৎসা নিতেই হবে।
মানসিক রোগ কি প্রতিরোধ করা যায়? |
হ্যাঁ, কিছু পজিটিভ জীবনধারা মানসিক স্বাস্থ্যকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করতে পারে:
আমাদের উচিত মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেওয়া এবং এটি বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।